বাংলাদেশের সরকার পতন ২০২৪ এর উপর একটি নৈর্ব্যক্তিক ভাবনা

Blog post description.

8/8/20241 min read

৮ আগষ্ট ২০২৪

সারজিস ও অন্যান্য আন্দোলনকারীদের রেকর্ড পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য হাসিনা সরকারের আমলাতন্ত্র সিংহভাগ দায়ী। যেখানে তাঁরা জুলাই মাসের শুরুতে নিজেরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫% রাখার ব্যাপারে এবং সব মিলিয়ে কোটা ১০% রাখার জন্য মত দিয়েছিল এবং বিগত বি সি এস পরীক্ষাগুলোর হিসেবে দেখা যায় সবেমাত্র ৭-১০% যোগ্য প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রদায় হতে পাওয়া গেছে সেখানে কেন তাঁরা এ বিষয়টি নিয়ে এত গড়িমসি করল? এই অন্যায্য এবং অপ্রয়োজনীয় কোটা কেন এতদিন রাখা হল? কেন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা বুঝাতে ব্যার্থ হল?

আরেকটি আবর্জনার সৃষ্টি হয়েছিল চরম তেলবাজ তথাকথিত সাংবাদিকদের নিয়ে। তাদেরকে কেন এত গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রেস ব্রিফিং করতে হত? পৃথিবীর কোন দেশে এটা আছে। এই তেলবাজ গোষ্টির প্ররোচনায় একটি প্রশ্নে দিক হারিয়ে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পুরো কাঠামোর প্রতিটা অংশে সিদ্ধান্ত ও কাজ করার প্রক্রিয়ায় পচন ধরেছে। এর ফলে সরকারের কোন একটি ক্ষেত্র থেকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে চিন্তা ও পরামর্শ তুলে ধরার ধারা ক্ষত বিক্ষত হয়ে বিলুপ্ত হয়েছে। তল্পীবাহকরা একদিকে ক্রমাগত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে এর মৌলিক শক্তিকে দিকভ্রান্ত করেছে আর অন্য দিকে এই উদ্দেশ্য তাঁরা একটি যোগ্য উত্তরসুরী তৈরী করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যার্থ হয়েছে।

সাধারণ ছাত্ররা আপাত দৃষ্টিতে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে দেখা গেলেও তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা, বিচার করার ক্ষমতা, আর সঠিক সময়ে ঠিক সঠিক সিদ্ধান্ত দৃঢ়ভাবে নেওয়া প্রমান করে যে এতে শুরু থেকেই একটি নিবেদিতপ্রান ও বিচক্ষন ঘটক পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। জামাত, শিবির শুরু থেকেই এতে যুক্ত থাকলেও তারা অতি সুচারূভাবে এতে নিজেদের সম্পৃক্ততা লুকিয়ে রেখেছে। চূড়ান্ত আঘাতের সময় ঘনিয়ে আসলে তাদের জংগী ও মৌলবাদী অংশ, এবং হেফাজত ও চরমোনাই পীরের অনুসারীরা জিহাদি জোসে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মিছিলে সামিল হয়েছে। তারা সুনিপূনভাবে সামগ্রিক জনগোষ্টিকে তাদের পক্ষে রাখতে পেরেছে, তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এদেশের জনগন এবং তাদের মাঝেও এই মনোভাব সঞ্চারিত হয়েছে। অবশেষে ঊর্ধতন সেনা কর্মকর্তারা ভেটো দিলে, পরিস্থিতি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যায়।

রাগের মাথায় কোন কিছু করতে নেই। রাগের মাথায় ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা যখন কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে এক মুখের কথায় সব কোটা বাদ দিয়ে দেন তখন এটা না করে যদি একটু খতিয়ে দেখে এর পরিমান কমাত তাহলে আজ আবার তাঁকে এর পক্ষে বলতে হত না। এত বিপুল সংখ্যাক মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার না ছিল কোন যুক্তিকতা, না ছিল কোন কার্যকারিতা। হুদাই তিনি এমনটা করেছিলেন আর আমলাদের কেউ এ বিষয়ে তখনও কোন ভূমিকা নেয়নি। বিষয়টা ছিল অতি সহজ, পরিসংখ্যান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বুঝালে তাঁর না বুঝার কোন কারনই ছিল না।

২০২৪ সালে হাইকোর্ট এটা পুনর্বহাল করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের এটর্নী জেনারেল পুনর্বহালের বিরুদ্ধে ঐ দিনই আপীল করে। সুপ্রীম কোর্ট ২০১৮ এর স্থিতাবস্থা বহাল রাখে অর্থাৎ এটা বাতিলই থাকে। ৭ আগষ্ট এর চূড়ান্ত ৱায় হবে আর শেখ হাসিনা সহ সরকারের সবাই ছাত্রদের পক্ষে। এ সত্বেও জামাত শিবির চক্রান্তমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরী করে এবং পরে ভাংচুড় করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যে পুলিশকে এর মোকাবেলায় বলপ্রয়োগে বাধ্য করা হয়। উদ্দেশ্য লাশ ফেলা, যত লাশ ফেলবে তত লাভ।

বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে পুলিশ একশনে গেলে লাশ পরবেই, কোথাও না কোথাও একটা না একটা ভূল হবেই এবং এটাই ছিল এই চতুর গোষ্টির উদ্দেশ্য। নিপূন সাংগঠনিক দক্ষতায় তারা তাদের উদ্দেশ্য সুচারূভাবে সফল করেছে। এই লাশ সমূহের জন্য আসলে শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকার নয় বরং এই সুচতুর গোষ্টিই দায়ী কিন্তু ইতিহাস সবসময় বিজয়ীর পক্ষে কথা বলে। আজ তাঁরা নয়, শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারকেই এই দায় নিতে হবে ইতিহাসের কাঠগড়ায়।

এক্ষেত্রে এদেশের মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্টানগুলো এই জেহাদী গোষ্টি তৈরী এমন অভাবনীয় বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরি উপাদান হিসেবে প্রমানিত হয়েছে।

একটা গল্প বলার লোভ এখানে সামলাতে পারছি না। এক লোক ট্রেনে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা কমলাপুর ষ্টেশনে এসে তাঁর বাসা কলাবাগানে যাবার জন্য একটা সিএনজি ভাড়া করলেন। চালক কিছুদুর এসে তাঁর গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে আরেকটা সি এন জি তে উঠিয়ে দিলেন। শাহবাগে আসার পর সি এন জি টি পুলিশ চেক কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য পুলিশ থামায় আর তখনি দেখেন এই সি এন জির পেছন হতে বিন্দু বিন্দু করে রক্ত পড়ছে। পুলিশ এটা খুলে দেখে মানুষের লাশ, কাটা এবং পলিথিন মুড়িয়ে বস্তাবন্দী। আর যায় কোথায়, চালক ও যাত্রী পাকড়াও। বিচারের সব প্রক্রিয়া শেষে বিচারক এই লোকের ফাঁসী দেন। আদালত থেকে বের হলে সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি আসলেই এমন নির্মম খুন করতে পেরেছিলেন”? জবাবে তিনি বলেন, “জ্বী না, এই খুনটি আমি করিনি কিন্তু এমন আরেকটা খুন আমি করেছিলাম”।

এই গল্প হতে নেয়ার বিষয় হল, আমরা কোন একটি অন্যায় করে ছাড়া পেলেও সৃষ্টিকর্তা কোন না কোন এক উছিলায় আমাদেরকে এর প্রতিফল দিয়ে থাকেন।

যেখানে পন্ডিত সমাজে এটা বলা হচ্ছিল যে বর্তমান যুগে বিপ্লব অসম্ভব সেখানে বাংলাদেশের এই বিপ্লব তাদেরকে ভূল প্রমানিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই অসম্ভব বিপ্লব সংঘটিত হবার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। চীন যে বিদেশী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্জন করেছে এবং এটা যে তাদের রেজিম ধরে রাখতে ও দীর্ঘমেয়াদি করতে অতি প্রয়োজন এটা এই বিপ্লবের মাধ্যমে আবারো পরিষ্কার হয়েছে। যদিও বা তাদের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনদিন এ পরিস্থিতি তৈরী করারো প্রয়াস নেয়, অন্তত নিজেদের জনগোষ্টিকে বাইরের শক্তি দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হওয়া থেকে তাঁরা সক্ষম হবে।